মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। যার নিবন্ধিতঅটোরিকশা একটিও নেই।
বেসরকারি একটি সংস্থার তথ্যমতে অনিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা প্রায় ৭০ হাজারের মত। ফলে অদক্ষ চালকের কারণে জেলার ৫ উপজেলায় প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
গত চার মাসে ১৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় অন্তত চালকসহ ৯ জন মারা গেছেন। একই সঙ্গে নেই কোনো নিয়ম-কানুন। অটোচালকরা তাদের নিজেদের ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে। এতে ভোগান্তিসহ অতিষ্ঠ সাধারণ যাত্রী।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ হলেও রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ-মজুচৌধুরীর ঘাট -চৌমহনী-ফরিদগঞ্জ ও চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের রায়পুর অংশে অটোরিকশা চলাচল করছে। এদিকে, মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত গতি-ও অটোরিকশার কারণে দুর্ঘটনা কমছেনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুরের উত্তর তেমুহনী, দক্ষিণ তেমুহনি থেকে সদরের নতুন বাসটার্মিনাল, দালালবাজার, রাখালিয়া বাজার, বাসাবাড়ি বাজার, রায়পুর বাসটার্মিনাল, গাজিনগর সড়ক ও উত্তরমাথা (আলিয়া মাদরাসা) পর্যন্ত এ মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল করছে।
জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর সেবারহাট এলাকায় অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারালে চালক মারা যান। ১৮ ডিসেম্বর সোনাইমুড়ি এলাকার মহাসড়কে দুটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজ ছাত্রী নিহত হন। ২১ ডিসেম্বর মহাসড়কে বাসচাপায় অটোরিকশার দুই যাত্রী মারা যান। ৩০ নভেম্বর রামগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশার এক যাত্রী নিহত হন। ১৩ নভেম্বর রামগতিতে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী মারা যায়।
৭ জুলাই বোয়ার্ডার এলাকায় ট্রাক্টরের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে অটোরিকশার যাত্রী নিহত হন। ৮ সেপ্টেম্বর অটোরিকশার চাপায় শান্তা নামের শিশু মারা যায়। গত এক বছরে জেলায ১৩টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে যানবাহনের চালক ও মালিকের বিরুদ্ধে মোটরযান আইনে গত নভেম্বর মাসে প্রায় ১৪৩টি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ( চলতি ডিসেম্বর মাস) ১৮ টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের জরিমানা বাবদ ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা হয়েছে। প্রতি মাসেই মোটর অভিযান পরিচালনার তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বেশি জরিমানা এসেছে। করোনাকালিন ট্রাফিক সপ্তাহ বন্ধ থাকার কারনে বেশি অভিযান হয়নি।
জানা যায়, ১৯৯০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে লক্ষ্মীপুরে নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা (সিএনজি)। এর মধ্যে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৭ হাজার ২০০। এর বাইরে প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কে চলাচল করছে। অটোচালকের মধ্যে প্রায় প্রায় তিন হাজার জনের লাইসেন্স আছে। বাকি চালকদের লাইসেন্সও নেই। একটা অটোরিকশা ও কোন চালকের লাইসেন্স নেই। কয়েকদিন আগে উচ্চ আদালতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শহর থেকে সকল অটোচালক উচ্ছেদ করতে বলা হয়েছে।
সানজিদা নামের নবম শ্রেণির এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, সকাল ৮ টার পর থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ট্রাফিক মোড়ে অটোচালক দের দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। রাস্তা পার হওয়া যায় না, অন্যের সহযোগিতায় তা পার হতে হচ্ছে।
আবদুল মজিদ নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, শহরের সরকারি হাসপাতালের সামনে থেকে শুরু করে, ট্রাফিক মোড়, উপজেলা পরিষদ সড়ক, পৌরসভা কার্যালয়, মধ্য বাজার ও জীনের মসজিদ সড়ক পর্যন্ত অটোর যানজট লেগে থাকে। একজন ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। তাদের ইচ্ছামত ভাড়া আদায় করছে। কোনো মানুষ প্রতিবাদ করলে নাজেহাল হতে হয়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার কয়েকজন মালিক বলেন, বিআরটিএ কয়েক বছর ধরে অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ধার কর্জ করে গাড়ি কিনে এখন না চালিয়ে উপায় কী?
অটোরিকশা চালকরা বলেন, বিআরটিএ তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনই নেয় না। কিন্তু পেটের তাগিদে গাড়ি চালাতে হয়। তারা ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আগ্রহী। আবার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দেয় না।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, পৌরসভা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজও অটোরিকসা বা চালকদের কোনো তথ্য বা তালিকা নেই। গত নভেম্বর মাসে পৌরসভা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় আপাতত ৫০০ দরিদ্র অটো চালককে লাইসেন্স দেয়া হবে। এখন হাইকোর্টের রায়ের পর তা স্থগিত করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভা মেয়র মোজাম্মেল হায়দর মাসুম বলেন, লক্ষ্মীপুর শহর দিয়ে যে পরিমাণ অটোরিকশা চলাচল করছে তা অভাবনীয়। এদের ব্যক্তি কিংবা গাড়ির কোনো লাইসেন্স নেই। তবে তাদের একটা জীবিকা এটি। সরকার তাদের লাইসেন্সের সুযোগ দিলে নিদিষ্ট পরিমাণ অটোরিকশা শহরে চলাচল করতো। তাহলে যানজট সৃষ্টি হতো না কিংবা অদক্ষ চালকের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ হতাহত হতো না। তবে এসব অটোরিকশার বিরুদ্ধে সরকারি কোনো প্রদক্ষেপ থাকলে অবশ্যই তা পালন করা হবে।
জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন শান্ত বলেন, লাইসেন্স নিতে হলে সবাইকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু অটোরিকশা চালকদের বেশির ভাগই পড়াশোনা জানেন না। তার ওপর তারা আইনও মেনে চলেন না। মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এরপরও চলাচল করায় বিআরটিএ বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করেছে। শহর থেকে সকল অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তুলে নিতে কয়েকদিন আগে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে অটোচালকদের পক্ষে আবার আপিলও করা হয়েছে। এ রায়ের পর অভিযান চালানো হবে। অনুমতি ছাড়া ব্যাটারিতচালিত সব অটোরিকশা ডাম্পিং করা হবে।
Leave a Reply